বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১:২২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শ্বেতিরোগ আর নয় হতাশা

শ্বেতিরোগ আর নয় হতাশা

স্বদেশ ডেস্ক:

আমাদের ত্বকের মেলানোসাইট কোষ থেকে মেলানিন নামক পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থ উৎপন্ন হয়। কোনো কারণে এই কোষ নষ্ট হয়ে গেলে আস্তে আস্তে ত্বক সাদা হয়ে যায়।

ত্বক সাদা হলেই কী শ্বেতিরোগ?

ত্বক সাদা হওয়ার অনেক কারণ আছে। রক্তনালির কোনো অংশ সংকুচিত হয়ে গেলে সেই অংশ সাদা হয়ে যায়। শিশু বয়স থেকে লাল বা বাদামি রঙের তিল ছাড়াও সাদা রঙের তিল হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বড় হয় তখন একে নেভাস অ্যামিনিকাস বলে। রোদে পুড়ে গেলে বা সানবার্ন হলে ত্বকের কিছু পুড়ে গিয়ে সাদা ছোপ পড়ে। কিছু ফাঙ্গাল ইনফেকশন আছে যাকে ভারসিকালার বলে, যা ছোদ বা ছুলি নামে পরিচিত। সেখানেও সাদা হতে পারে।

কখন ও কীভাবে নির্ণয় করা হয়

২০ বছর বয়সের পর থেকে শ্বেতিরোগ বেশি হয়, তবে এটি যে কোনো বয়সে হতে পারে। পরিবারের কারও শ্বেতি থাকলে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে শতকরা ২০ জনের এ রোগ হতে পারে। শ্বেতি কখনোই ছোঁয়াচে নয়, সংক্রামকও নয়। ত্বক বিশেষজ্ঞরা উডস ল্যাম্প নামক একটি যন্ত্র দিয়ে ত্বক পরীক্ষা করলে দুধের বা চকের মতো সাদা চকচকে ত্বক দেখা যায়। তখন একে শ্বেতি বলে ধরা যায়। মুখের চারদিকে, আঙুলের মাথায়, হাতের পাশে শ্বেতিরোগ বেশি হয়। শ্বেতিরোগ হলে খাবার নির্বাচনে কোনো বাধানিষেধ নেই। তবে বেশি ডোজে কেউ প্রতিনিয়ত ভিটামিন সি খেলে রং তৈরি করার পাথওয়েতে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।

চিকিৎসা

অনেকের ধারণা শ্বেতি কখনোই ভালো হয় না। শুরুতেই এর চিকিৎসা করা ভালো। দেরিতে আসলে ও পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরলে তখন চিকিৎসা দুঃসাধ্য হয়ে যায়। এর চিকিৎসায় ২০ শতাংশ হাইড্রোকুইনোন মলম দেওয়া হয়। তবে লক্ষ রাখতে হবে এ মেলানিন সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করে। শ্বেতিরোগীদের ত্বকের এ প্রটেকশন নেই বলে রোদে বের হওয়ার আগে ছাতা বা মোটা কাপড় পরে বের হতে হবে এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এ রোগীদের চুল এবং লোমও সাদা হয়ে যেতে পারে। তাই শরীরের যে অংশে লোম আছে সেখানে শ্বেতি হলে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। ঠোঁট, আঙুলের মাথার শ্বেতি হলে ভালো করা কষ্টকর। শ্বেতি রোগে সাধারণত চুলকানি হয় না। তবে শ্বেতির সঙ্গে অ্যাকজিমা হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে ত্বকে চুলকানি হতে পারে।

কারও ত্বকে শ্বেত হলে সমাজের অনেকেই ভাবেন এটি বোধ হয় কুষ্ট রোগ। তখন তারা রোগীর সঙ্গে মিশতে চান না। এ জন্য রোগী ও পরিবারের সদস্যদের কাউন্সিলিং দরকার হয়। শ্বেতিরোগীদের কসমেটিক মেকআপ করে সাদা অংশ ঢেকে দেওয়া যায়, একে কসমেটিক কেমোফ্লাক্স বলে। শ্বেতির যে অংশ মেলানোসাইট একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানে যত ওষুধই দেওয়া হোক না কেন, সেক্ষেত্রে ত্বকের ভালো অংশ থেকে কোষ নিয়ে সাদা অংশ মিনিপাঞ্চ গ্রাফটিং করা হয়। এ ছাড়া মেলানোসাইট ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা কালচারও করা যায়। এছাড়া ফটোথেরাপি বা নেরোবেন্ডইউভিবিও কার্যকরী চিকিৎসা। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এ থেরাপি নিতে হয়।

আধুনিক গবেষণায় নতুন নতুন কার্যকরী চিকিৎসা এখন প্রেসক্রাইব করা হয়। এ রোগীরা সব সময় সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকবেন।

লেখক : ত্বক ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, বিভাগীয় প্রধান, ত্বক বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877